দীর্ঘ দিন পর খুলছে সিলেটের পাথর কোয়ারি
কামাল খানঃ
দীর্ঘ ৬ বছর বন্ধ থাকার পর অবশেষে খুলতে যাচ্ছে সিলেটের পাথর কোয়ারি। শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের করা রীট পিটিশনের ভিত্তিতে হাইকোর্ট সনাতন পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলনের নির্দেশ দিয়েছেন। এর মধ্যে জাফলংয়ের ব্যাপারে ২২ অক্টোবর, বিছনাকান্দির ১১ নভেম্বর ও ভোলাগঞ্জের ব্যাপারে ১৪ নভেম্বর পাথর উত্তোলনের নির্দেশনা দেন হাইকোর্ট।
জানা গেছে, দীর্ঘ ৬ বছর ধরে বন্ধ রয়েছে সিলেটের ভোলাগঞ্জ, জাফলং ও বিছনাকান্দিসহ অন্যান্য পাথর কোয়ারি। কোয়ারি বন্ধ থাকায় দুর্বিষহ দিন কাটাচ্ছেন কোয়ারি সাথে সংশ্লিষ্ট কয়েক লক্ষাধিক মানুষ। সিলেটের কয়েকটি এলাকার স্থানীয় অর্থনীতির মজুবত ভিত্তি হচ্ছে পাথর কোয়ারি। এবার সেই কোয়ারিগুলো থেকে পরিবেশ সম্মতভাবে পাথর উত্তোলনের সুযোগ করে দেয়া জরুরী বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা। একই সাথে কোয়ারি চালু হলে লাখো শ্রমিক ফিরবেন তাদের কর্মে।
পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে এমন কারণে কোয়ারি বন্ধ থাকলেও ব্যাবসায়ীদের দাবি ৩ কোয়ারি থেকে সনাতন পদ্ধতিতে পাথার উত্তোলন করতে হাইকোর্ট আদেশ দিয়েছেন। আদেশ কার্যকরে প্রশাসনের দ্বারস্থও হয়েছেন তারা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিবছর উজানের ঢলের সাথে নেমে আসা বালু-পাথরে নাব্যতা হারাচ্ছে নদীগুলো। সিলেটকে আকস্মিক বন্যা থেকে রক্ষা করতে বালু-পাথর উত্তোলন প্রয়োজন। আর প্রশাসন বলছে, আদালতের সার্টিফাইড কপি আসলে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
জানা গেছে, ২০১৮ সাল থেকে বন্ধ রয়েছে পাথর উত্তোলন। এর ফলে কোয়ারি নির্ভর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ে। দীর্ঘদিন ধরে অচলাবস্থা থাকায় ব্যবসায়ীরা হয়ে গেছেন দেউলিয়া। শ্রমিকরা হয়ে পড়েছেন কর্মহীন। পাথর উত্তোলন করায় পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে এমন অভিযোগ থাকলেও ব্যবসায়ীদের দাবি কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলন গাইডলাইন ২০১৪ মোতাবেক সনাতন পদ্ধতিতে পাথার উত্তোলন করতে হাইকোর্ট আদেশ দিয়েছে। এদিকে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে বালু ও পাথর উত্তোলন প্রয়োজন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
এ ব্যাপারে শাহজালাল বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. জহির বিন আলম বলেন, প্রতিবছর উজানের ঢলের সাথে নেমে আসা প্রচুর বালু-পাথরে সীমান্ত এলাকায় নদীগুলো নাব্যতা হারাচ্ছে। যার ফলে ঢলের পানেতে সিলেটে আকস্মিক বন্যা দেখা দেয়। সিলেটকে আকস্মিক বন্যা থেকে রক্ষা করতে বালু-পাথর উত্তোলন প্রয়োজন। তবে তা একটি নির্দিষ্ট পরিমানে সনাতন পদ্ধতিতে হতে হবে। এ বিষয়ে আমাদের বিভাগীয় কমিশনারের সাথে বৈঠক হয়েছে। নদী থেকে কতটুকু বালু-পাথর উত্তোলন করা দরকার সে ব্যাপারে আমরা পরামর্শ দিয়েছি।
সিলেট জেলা প্রশাসক শের মাহবুব মুরাদ জানান, ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলনের হাইকোর্ট নির্দেশনা দিয়েছে। তবে আমাদের কাছে এখনো এমন কোন আদেশ আসেনি। আদালতের সার্টিফাইড কপি আসলে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।