1. admin@dailydhakarcrime.com : admin :
রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৩৫ অপরাহ্ন
সর্বশেষ সংবাদ :
জাতীয় গণমাধ্যম কমিশন কেন্দ্রীয় কমিটি কে পঞ্চম তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে গোলাপগঞ্জ উপজেলায় সংবর্ধিত, শরণখোলায় ইউএনও’র বিরুদ্ধে চাঁদা আদায়ের অভিযোগে মানববন্ধন ধামইরহাটে শুভ বড়দিন উপলক্ষে ৬৯টি গীর্জায় জিআর চালের ডিও বিতরণ সাতক্ষীরায় প্রতিবন্ধীদের ১০ শতাংশ অগ্রাধিকারের দাবিতে মানববন্ধন টঙ্গীর ময়দানে তাবলিগের দুই পক্ষের ব্যাপক সংঘর্ষে নিহত ৩ আহত ১০০ জনের বেশি দাবিকৃত চাঁদা না দেয়ায় পূবাইলে দোকান ভাঙচুরসহ গরু নেয়ার পূবাইল থানায় অভিযোগ সাতক্ষীরায় শিশু রাহি হত্যার আসামীর ফাঁসির দাবীতে মানববন্ধন সিলেটের গোলাপগঞ্জ মডেল থানায় যৌথ বাহিনীর অভিযানে স্বেচ্ছাসেবকলীগ ও ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার বৃহত্তর দক্ষিণ অঞ্চলীয় সমিতি গাজীপুর এর উদ্যোগে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে আলোচনা ও পরিচিতি সভা। টঙ্গীতে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা ও দলীয় কার্যালয় উদ্বোধন।

প্রধান শিক্ষকই ঠিকাদার, অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ,

Reporter Name
  • প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর, ২০২৪
  • ৭৭ বার দেখা হয়েছে

প্রধান শিক্ষকই ঠিকাদার, অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ,

নীলফামারী প্রতিনিধি,

নীলফামারীর ডোমারের হরিণচড়া ইউনিয়নের আঠিয়াবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হায়াতুল আলম। বিদ্যালয়ে চাকরির পাশাপাশি করছেন ঠিকাদারি। বিদ্যালয়ের ক্লাস চলাকালীন সময়ে ঠিকাদারি কাজে ব্যস্ত থাকেন তিনি। এ ছাড়াও প্রতিবন্ধী ও অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের বরাদ্দের টাকা, নিয়োগ বাণিজ্য, বিদ্যালয়ের বাউন্ডারি ওয়াল ও মাঠ সংস্কারের টাকা আত্মসাৎসহ এমন অসংখ্য অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। প্রধান শিক্ষকের এমন দ্বায়িত্ব অবহেলায় পড়ালেখার আগ্রহ হারাতে বসেছে শিক্ষার্থীরা। প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে বিদ্যালয়টির শিক্ষার পরিবেশ দ্রুত ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন অভিভাবকরা।

সরজমিনে গিয়ে জানা যায়, ডোমার উপজেলার হরিণচড়া ইউনিয়নের আটিয়াবাড়ী গ্রামের চারপাশে ১০ থেকে ১২ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো মাধ্যমিক বিদ্যালয় না থাকায় তৎকালীন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম ও অধ্যাপক নুরুল ইসলাম এবং স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সহযোগিতায় ১৯৯২ সালে আটিয়াবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়টি স্থাপন করা হয়। বিদ্যালয়টি ২০০০ সালে মাধ্যমিক স্কুল হিসেবে এমপিও ভুক্ত হয়। বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বর্তমানে ৭৫৬ জন। ১৯৯৫ সালের ১৯ অক্টোবর ওই বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন হায়াতুল আলম।

নীতিমালা অনুযায়ী এমপিওভুক্ত কোনো শিক্ষক-কর্মচারী একইসঙ্গে একাধিক কোনো পদে/চাকরিতে বা আর্থিক লাভজনক কোনো পদে সম্পৃক্ত থাকার নিয়ম নেই। তবে এই নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছেন হায়াতুল আলম। সুকৌশলে উচ্চ মাধ্যমিক পড়ুয়া ছেলের নামে ‘মেসার্স ফাহিম এন্ড হুমা ট্রেডার্স’ নামের একটি সরকার নিবন্ধিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন তিনি। বিদ্যালয়ের ক্লাস চলাকালীন ঠিকাদারি কাজেই বেশিরভাগ সময় ব্যস্ত থাকতে দেখা যায় তাকে। বর্তমানে ডোমার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও চিলাহাটিতে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবন নির্মাণের কয়েক কোটি টাকার কাজ করছেন তিনি।

স্থানীয় বাসিন্দা ও অভিভাবকদের অভিযোগ, ব্যবসায়িক কাজে ব্যস্ততার কারণে বিদ্যালয়ে সময় দিতে পারেন না প্রধান শিক্ষক হায়াতুল আলম। প্রধান শিক্ষকের এমন দ্বায়িত্ব অবহেলায় পড়ালেখার আগ্রহ হারাতে বসেছে ছাত্র-ছাত্রীরা। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে বিদ্যালয়টির শিক্ষার পরিবেশ দ্রুত ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন অভিভাবকরা।

এদিকে গেল বছর বিদ্যালয়ের প্রতিবন্ধী ও অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের জন্য অনুদানসহ বিভিন্ন খাতে এককালীন বরাদ্দ হয়েছিল প্রায় ৫ লাখ। এতে নিয়ম অনুযায়ী প্রতিজন শিক্ষার্থী পাবে ৫ হাজার করে। তবে কোনো শিক্ষার্থীকে ২ হাজার ৫০০ টাকা আবার কোনো শিক্ষার্থীকে টাকা না দিয়েই প্রধান শিক্ষক ও বিদ্যালয়টির পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি ফিরোজ আল মামুন মোটা অঙ্কের অর্থ আত্মসাৎ করেন। বিদ্যালয়ের টিউশন ফি প্রতিবছর গড়ে ২ লাখ টাকা করে বরাদ্দ পায়। নিয়ম হলো এই টাকার একটি অংশ শিক্ষক, কর্মচারীরা স্কেল অনুযায়ী পাবেন। বাকিটা স্কুল উন্নয়ন কাজে ব্যবহার হবে। বছরে দুইবার পাওয়ার কথা থাকলেও তা দেওয়া হয় কালেভদ্রে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিদ্যালয়ের বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ ও মাঠ সংস্কারে ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ পায়। তবে নামমাত্র কাজ করে পুরো টাকা আত্মসাৎ করেন প্রধান শিক্ষক হায়াতুল আলম ও সভাপতি ফিরোজ । ২০২৩ সালে বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক, পরিচ্ছন্ন কর্মী, অফিস সহায়ক ও পিয়ন পদে নিয়োগ হয়। প্রতিটি পদের জন্য ১১ থেকে ১৩ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। এ ছাড়াও ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট, অফিস সহকারী পদে দুই থেকে তিনজনের আগাম টাকা নিয়ে রেখেছেন প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি।

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল মজিদ বলেন, ‘স্কুলের মাঠে মাটি ফেলার কথা ছিল ১০০ ট্রলি অথচ ৮-৯ ট্রলি মাটি ফেলে হেডমাস্টার ও সভাপতি পুরো টাকা মেরে দিয়েছেন। কিছু নিয়োগ হইছিল সেখানে ৭০ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। কোনো পরীক্ষা ছাড়াই এসব নিয়োগ হয়েছে। বরাদ্দ এলে বিদ্যালয়ের বাউন্ডারি ওয়ালের কাজও করা হয় নাই। হেডমাস্টার ঠিকমতো স্কুলে থাকেন না। উনি ঠিকাদারি কাজে ব্যস্ত থাকেন বেশি সময়। এভাবে স্কুলের লেখাপড়ার মান নষ্ট হচ্ছে। রেজিস্ট্রেশনের সময় অন্য স্কুলের তুলনায় ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বেশি নেওয়া হয়। আমরা চাই আমাদের এলাকার স্কুলে লেখাপড়ার মান যেন ভালো হয় এবং শিক্ষকরা যেন সময়মতো স্কুলে আসেন। এতোদিন যা দুর্নীতি হয়েছে এগুলার প্রতিকার চাই।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক বলেন, ‘কিছুদিন আগে মাঠে সাত-আট ট্রলি মাটি ফেলেছিল। তারপর সভাপতি বলেছিলেন, “এখানে ৯০ ট্রলি মাটি ফেলা হইছে”। পরে প্রতিবাদ করার পরও কোনো কাজ হয় নাই। ওরা আওয়ামী লীগের লোক, ওরা যা বলছে সেটাই সঠিক। বাউন্ডারি ওয়াল দেওয়ার কথা ছিল অল্প একটু দিছে তারপর নাকি টাকা শেষ হয়ে গেল। এদিকে আবার স্কুলের ঘরও চলে না। সরকারি যত বাজেট আসে সব প্রধান শিক্ষক আর সভাপতির পকেটে ঢুকে। এদিকে হেডমাস্টার আবার ঠিকাদারি করে বেড়াচ্ছে। তাহলে স্কুলে সময় কখন দেয়। ঠিকাদারি করবে না স্কুলে সময় দিবে।‘

স্থানীয় বাসিন্দা মাহবুবার রহমান বলেন, ‘একজন প্রধান শিক্ষক ঠিকাদারি করলে স্কুলে কখন সময় দেবে। এটা তার ঠিক হচ্ছে না। কারণ স্কুলের শিক্ষার্থীদের তো দেখাশোনার দ্বায়িত্ব তার। অন্যান্য শিক্ষকরা ক্লাস করাচ্ছেন কি-না সেটাও তদারকির দ্বায়িত্ব তার। উনি কোন সময়ে স্কুলে সময় দেবে আর কোন সময়ে ঠিকাদারি করবে—এটা আমার বুঝে আসছে না। আমার কাছে মনে হচ্ছে, ঠিকাদারি করা উনার উচিত না।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রতিষ্ঠানটির এক শিক্ষক বলেন, গত ৫ আগস্টের পর থেকে উনি স্কুলে এলে আগে কখনোই স্কুলে সময় দিতেন না। ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের পর থেকে কিছুটা সময় দিতে শুরু করেছেন। শিক্ষকতা নয় উনার মূল পেশা ঠিকাদারি। সহকারী শিক্ষকসহ বিভিন্ন পদের নিয়োগে যে অর্থ বাণিজ্য ও অনিয়মের অভিযোগ, এটি এক প্রকার ওপেন সিক্রেট। কেউ নাই যে এসব বিষয়ে জানে না। যাকেই জিজ্ঞেস করবেন সেই আপনাকে সব বলে দেবে। নিয়োগের সময় লোক দেখানো নাম মাত্র পরীক্ষা হয়েছে। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি এমনভাবে দেওয়া হয়েছে যাতে কেউ আবেদন করতে না পারেন। শিক্ষকদের টিউশন ফিও তিনি আত্মসাৎ করেছেন। বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি ফিরোজ আল মামুনের যোগসাজসে এসব তিনি করেছেন। স্কুলের শিক্ষক হয়েও আমরা এ বিষয়ে প্রতিবাদ করতে পারি নি।

বিদ্যালয়টির পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি ফিরোজ আল মামুন বলেন, বিদ্যালয়ে যা কিছু হয়েছে সব নিয়মতান্ত্রিকভাবে হয়েছে। কাজ করতে গেলে কিছু ভুল হতেই পারে। আর প্রধান শিক্ষকের ঠিকাদারি করার বিষয়টি আমার জানা নেই।

তবে সকল অভিযোগ অস্বীকার করে প্রধান শিক্ষক হায়াতুল আলম বলেন, ‘ঠিকাদারির লাইসেন্সটা ছেলের নামে আছে। আমি মাঝেমধ্যে দেখাশোনা করি। আর আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তোলা হচ্ছে তা মিথ্যা বানোয়াট।’

নীলফামারী জেলা শিক্ষা অফিসার হাফিজুর রহমান বলেন, ‘এরকমটা যদি হয়ে থাকে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2023 ঢাকার ক্রাইম
প্রযুক্তি সহায়তায় মাহোস্ট আইটি