সাতক্ষীরায় ভুয়া সনদে চাকুরি বাঁচাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে স্কুলের প্রধান শিক্ষক
মিহিরুজ্জামান সাতক্ষীরাঃ
সাতক্ষীরায় কোমলমতি শিক্ষর্থীদের ভুল বুঝিয়ে জল ঘোলা করে নিজের অপকর্ম ও ভুয়া সনদে চাকুরি বাঁচাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে সাতক্ষীরা নবারুন স্কুলের প্রধান শিক্ষক মালেক গাজী।২০২৪ সালের অক্টোবরের শুরুতে যশোর শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের আদেশক্রমে বিদ্যালয় পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম স্বাক্ষরিত চিঠিতে অভিযোগ সত্যতা প্রতিয়মান হওয়ায় আলোচ্য শিক্ষকের বিরুদ্ধে উক্ত প্রতিষ্ঠানের সভাপতি বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ দেন।
বিদ্যালয়ের সভাপতি (অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শিক্ষা) মইনুল ইসলাম আগামী ২৪ অক্টোবর উক্ত বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সাময়িক বরখাস্ত এজেন্ডা উল্লেখ করে সভা ডেকেছেন।
তারপর শুরু হয় মালেক গাজীর দৌড়ঝাঁপ। কোথায় গেলে, কার কাছে গেলে, তার অপকর্ম ও ভুয়া সনদে চাকরিটা বাঁচবে। কোন কুল কিনারা নাপেয়ে মালেক গাজী ঘোলা জলে মাছ স্বীকার করার নোংরা খেলায় মেতেছে। ভুল বুঝিয়ে,নিজের অপকর্ম (অর্থ আত্নসাৎ) ও ভুয়া সনদে চাকরি কথা গোপন রেখে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের দিয়ে আন্দোলনের ঘৃর্ণিত পরিকল্পনা করে। যথারিতি শিক্ষার্থীরা আজ রবিরার সকাল ১০ টা থেকে বিভিন্ন ভুয়া বিষয় শোরগোল। এবং কিছু ক্ষন পর ঐ শিক্ষকের নির্দেশে আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থীরা।
২০২৩ সালের ডিসেম্বরে তারই সহকর্মী উক্ত বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো.আব্দুল মালেক গাজীর নানা অপকর্মের বিরুদ্ধে যশোর বোর্ডে অভিযোগ করেন। তারই ভিত্তিতে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম ভূঁইয়া অনিয়ম তদন্তের দায়িত্ব দেন উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা সঞ্জিব কুমার দাশকে। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারীতে তিনি প্রতিটি অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার কথা উল্লেখ করে তদন্ত প্রতিবেদনে দাখিল করেন।
উল্লেখ্য: ভুয়া সনদে দুইযুগ ধরে শিক্ষকতা (ইন-১১৮৮০৯ ও ইনডেক্র- ৫১৫১০০) চাকরি ও অর্থ আত্মসাত রাম রাজত্ব, খন্ডকালীন শিক্ষক অবৈধ,লুটপাট,ইচ্ছামত কমিটি তৈরী সহ নানা অপকর্ম প্রতিবেদনে দেখা গেছে।
১৯৯৯ সালের জুনে কারিমা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভুয়া কম্পিউটার সনদ ও স্নাতক ৩য় শ্রেনীর গোপন রেখে সহকারী শিক্ষক (কম্পিউটার) হিসেবে যোগদান। জনবল কাঠামো ১৯৯৫ অনুযায়ী প্রার্থীকে এসএসসি, এইচএসসি ও স্নাতক শ্রেণিতে দ্বিতীয় বিভাগে পাস থাকতে হবে। কিন্তু সে সময় তিনি বেসরকারী অনুমোদহীন প্রতিষ্ঠান থেকে ভুয়া কম্পিউটার সার্টিফিকেট দাখিল। স্নাতক ডিগ্রী ৩য় শ্রেনীর। ২য় বিভাগে পাশ উল্লেখ করে ২ হাজার ৫৫০ টাকার স্কেলের পরিবর্তে ৩ হাজার ৪০০ টাকার স্কেলে বেতন ভাতা গ্রহন।
২০০১ সালের ২০ নভেম্বর কারিমা স্কুল কর্তৃপক্ষ কম্পিউটার বিষয় খোলার আবেদন। ২০০২ সালের ৩১ জুলাই যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বোর্ডের নবম ও দশম শ্রেণিতে কম্পিউটার বিষয় খোলার অনুমতি সাক্ষর । বিষয় অনুমোদন হওয়ার আগে নিয়ম বহির্ভূতভাবে ২০০১ সালের ১ অক্টোবর এমপিওভুক্ত।
২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে (তার সকল ভুয়া শিক্ষা সনদ ধামা চাঁপা দিয়ে) নবারুণ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান। প্রধান শিক্ষকের ক্ষেত্রে জনবল কাঠামোর শর্তানুযায়ী সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ (টিটিসি) থেকে বিএড সনদ বাধ্যতামুলক। সেখানে“ রয়েল ইউনিভার্সিটি অফ ঢাকা”থেকে ভুয়া বি এড সনদ দাখিল। সনদে নেই রোল, রেজি: ও সিরিয়াল নং।
এছাড়া ২০১৪ সালের জুনে বিদ্যালয়টি সেকেন্ডারি এডুকেশন কোয়ালিটি অ্যান্ড অ্যাকসেস এনহান্সমেন্ট প্রজেক্ট (সেকায়েপ) থেকে ১ লাখ টাকা উদ্দীপনা পুরস্কার পায়। সেকায়েপ নীতিমালার শর্তভেঙ্গে আত্নসাৎ। প্রতিষ্ঠানের আয় ব্যয়ের কোনো হিসাব নেই তদন্তে শিক্ষকদের অভিযোগ ।
সরকারি নিয়ম নীতির তোয়াক্কা নাকরে ২০২২ সালে কমিটির সিদ্ধান্তে প্রতি শ্রেণিতে দুইটি বাড়তি শাখা ও ২৫ জন অনুমোদনহীন খন্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগ। খণ্ডকালীন ২৫ জন শিক্ষক দিয়ে স্কুলের মধ্যে চলে কোচিং বানিজ্য।
এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক আব্দুল মালেক গাজী বলেন, আমি কেন আন্দোলনে নামাবো। তারা শিক্ষক হিসেবে আমাকে ভালবাসে তাই তারা প্রতিবাদ করেছে। তদন্তে আলোচ্য বিষয়ে আপনি অভিযুক্ত কিন্তু কোমলমতি শিক্ষার্থীদের দিয়ে এসব কেন করাচ্ছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন ভাই এসব বিষয়ে কথা না বললে খুশি হবো।