ভ্যাট মওকুফ করেছে সরকার, কাপাসিয়ার পিআইও নেন সাড়ে দশ শতাংশ
নিজস্ব প্রতিবেদক :
কাপাসিয়া গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা), কাজের বিনিময়ে টাকা ( কাবিটা) ও সংস্কার কর্মসূচির অধীন বাস্তবায়িত প্রকল্পে অবৈধ আয়করের থাবা বসিয়েছেন প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা।
সরকার যেখানে গ্রামীণ রক্ষণাবেক্ষণ এবং সেবামূলক প্রকল্পে কোন প্রকারের আয়কর ও ভ্যাট মওকুফ করেছে সেখানে কাপাসিয়া উপজেলার পিআইও কুহিনূর রহমান প্রতিটি প্রকল্প থেকে ১০.৫০% ভ্যাট আদায় করছেন। এভাবে প্রতি বছরের বরাদ্দ থেকে তিনি অবৈধভাবে হাতিয়ে নিচ্ছেন অর্ধকোটি টাকারও বেশি।
পরিপত্র অনুযায়ী ২০১৬ সালে তৎকালীন পটুয়াখালী-৩ আসনের সংসদ সদস্য আ খ ম জাহাঙ্গীর এর করা অর্থমন্ত্রীর কাছে এক আবেদনের প্রেক্ষিতে আয়কর ও ভ্যাট মওকুফের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরিপত্রে উল্লেখ করা হয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সেবামূলক এ সমস্ত প্রকল্প থেকে মুনাফা অর্জনের সুযোগ না থাকায় অগ্রিম আয়কর ও ভ্যাট নেওয়ার সুযোগ নেই।
তবে কোহিনূর রহমান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মহাপরিচালকের নামে কয়েক বছর ধরে প্রকল্পের সভাপতিদের কাছ থেকে আয়করের নামে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন।
সূত্রমতে ২০২২-২৩ অর্থ বছরে কাপাসিয়া নির্বাচনী এলাকায় ২য় পর্যায়ে কাবিটার ৩৯ টি প্রকল্পে বরাদ্দ আসে ৯৪ লাখ ৫৭ হাজার ৪৯২ টাকা,টি- আর বরাদ্দ আসে ৩১ টি প্রকল্পে ৪৪ লাখ ৫৮ হাজাী ৩৩৪ টাকা,কাবিখা চাল ৫ টি প্রকল্পে চালের মূল্য অনুযায়ী ২৯ লাখ ৭৭ হাজার ৩১৭ টাকা, কাবিখা গম ২৬ টি প্রকল্পে ৪২ লাখ ৪৫ হাজার ৮৮৮ টাকা বরাদ্দ আসে।
২য় পর্যায়ে উপজেলা পরিষদ ভিত্তিক কাবিটা ২৪ টি প্রকল্পে ৫৬ লাখ ৪৮ হাজার ১৯৩ টাকা, টি- আর ২৩ টি প্রকল্পে ২১ লাখ ১১ হাজার ৯৫৮ টাকা,কাবিখা চালের মূল্য অনুযায়ী ৬ টি প্রকল্পে ১৭ লাখ ৮১ হাজার
৪৬২ টাকা, ১ম পর্যায়ে কাবিখা গমের টাকা মূল্য অনুযায়ী ১২ টি প্রকল্পে ২৫ লাখ ৩৮ হাজার ৪৫১ টাকা বরাদ্দ আসে।
এসব প্রকল্পের সভাপতির কাছ থেকে কোহিনূর রহমান ১০.৫০% হারে বিল থেকে নগদ টাকা আদায় করে রাখেন।
এছাড়াও ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরের গ্রামীণ রাস্তা টেকসই করণের লক্ষে হেরিং বোন বন্ড (এইচবিবি) প্রকল্পের আওতায় উপজেলায় ৫ কোটি ৬৪ লাখ ৫৪ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।
এ প্রকল্পের বিষয়ে এলাকাবাসী বলেন, কাজের শুরুতেই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ নয় ছয় করার পায়তারা শুরু করে। তারা শুরুতেই খুবই নিম্ন মানের ইট সাইটে নিয়ে আসে এবং বক্স কাটিং এর পর ২-৩ ইঞ্চি বালি ব্যবহার করে। আমাদের অভিযোগ ও প্রতিবাদের মুখে প্রথমে ২/১ গাড়ি ইট সরিয়ে নিলেও পরবর্তীতে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা কোহিনুর রহমান কে ম্যানেজ করে ২/৩ নং ইট দিয়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করে। আমরা এলাকাবাসী বার বার উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার নিকট অভিযোগ করলেও তিনি কর্ণপাত করেনি। উল্টো আমাদের ধমকিয়ে উনার অফিস হতে বের করে দেন।
এলাকাবাসী আরও বলেন, ঠিকাদাররা তাদেরকে বলেন ১০% মহাপরিচালক এবং ৫% অফিস খরচ
হিসেবে দিয়ে দিতে হয়েছে।
এখন বরাদ্দকৃত স্থানে বালি কম আর নিম্ন মানের ইট না দিলে টাকা কোথা থেকে দিবো।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত অর্থবছরে এসব অনিয়মে সব থেকে বেশি সহযোগিতা করেছেন শাখাওয়াত নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি। অফিসে সরকারি ভাবে নিয়োগ প্রাপ্ত কর্মচারী থাকা সত্বেও তাকে দিয়ে টি.আর,কাবিটা,কাবিখা প্রকল্প সাইট
পরিমাপ এবং পরিদর্শন কাজ করানো হতো।
কাপাসিয়া ঘাগটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ বলেন, আমরা ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে মেম্বার চেয়ারম্যানরা যে সমস্ত প্রকল্পের কাজ করে থাকি এসমস্ত প্রকল্পের চূড়ান্ত বিল আনার সময় পিআইও সরকারের কথা বলে ১০.৫০% আয়কর কেটে রাখে। এই আয়কর আমাদের দিতে হয়না, টাকাটা পিআইওকে নগদ দিয়ে আসতে হয় পরে তিনি জমা দিয়ে দেন। একই পরিষদের এক মেম্বার বলেন, আমাদের যদি দুই লাখ টাকার চেক দেওয়া হয় তাহলে টাকা উত্তোলনের পরে পিআইওকে সাড়ে দশ শতাংশ হারে টাকা নগদ অফিসে দিয়ে আসতে হয়।
কাপাসিয়া চাদপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হালিম ভূইয়া বলেন,আমার সাবেক এপপির কাছ থেকে যে কাজ পেতাম তার বিল আনার সময় অফিসে সাড়ে দশ শতাংশ ভ্যাট দিয়ে আসতাম।
অভিযোগ রয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার ৩য় বারের মতো ক্ষমতায় আসলে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেন কোহিনূর রহমান। ২০২৩ সালে তাকে কাপাসিয়া উপজেলা থেকে বদলি করা হলেও তিনি প্রভাব খাটি বদলি কাটিয়ে ফেলেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তিনি সরকারের নামে আয়করের পরিমাণ বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করেছেন। তার এসব অপকর্মের সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন অফিস সহকারি সুমন আহমেদ। সুমন কাপাসিয়ার স্থানীয় বাসিন্দা হওয়ায় উপজেলায় তার আধিপত্য রয়েছে। নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক অফিসের এক কর্মচারী জানান, গতবছর পিআইও সুমনকে বদলি করান। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে মনোমালিন্য ছিল। তবে পরে আবার গত বছর সুমন প্রথমে কালিগঞ্জ পরে আবার কাপাসিয়ায় বদলি হয়ে আসেন। এরপর থেকে দুজন মিলে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কাপাসিয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা কোহিনূর রহমান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন আমি কোন টাকা নেইনি। হয়ত আমার অফিসের কেউ নিয়ে থাকতে পারে।
কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবুল কালাম মোঃ লুৎফর রহমান বলেন,অভিযোগ তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।