সিটিভির জিএম এর বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় !! অসহায় শিল্পী কলাকুশলী, বঞ্চিত শিল্পী সমাজ।
রাহিমা আক্তার মুক্তা :-
বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্টগ্রাম কেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজার জিএম (চলতি দায়িত্ব) নূর আনোয়ার হোসেন এর বিরুদ্ধে সীমাহীন দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, অধীনস্থ কর্মকর্তাদের কে হুমকি সহ নারী গঠিত বিভিন্ন অপকর্মের অভিযোগ উঠেছে ।
জানা যায় নুর আনোয়ার হোসেন রঞ্জু মূলত বাংলাদেশ টেলিভিশনের অডিয়েন্স রিসার্চ অফিসার / স্ক্রিপ্ট এন্ড মনিটরিং এডিটর (গ্রেড টু) হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা I কিন্তু ২০০৯ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমাম এর সুপারিশ ক্রমে তাকে বিধি বহির্ভূত ভাবে স্থায়ী পদ প্রযোজক (গ্রেড – ২) পদায়ন এবং পদোন্নতি করা হয় । বিটিভির ইতিহাসে এমন অনিয়ম এটিই একমাত্র এবং প্রথম I
এই অনিয়মের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে বাংলাদেশ টেলিভিশনের ১৪ জন কর্মকর্তা তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর প্রেরিত পদায়ন এবং পদোন্নতি বাতিলের জন্য লিখিতভাবে আবেদন করেন । যা গত ৯ এপ্রিল ২০২৪ তারিখে বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালকের মাধ্যমে প্রেরণ করা হয় ।
তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের একান্ত কাছের ব্যক্তি হিসেবে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নূর আনোয়ার হোসেন বিটিভিতে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেছেন । সম্প্রতি সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে তিনি ভোল পাল্টে বাংলাদেশ টেলিভিশন ঢাকা কেন্দ্রের জিএম হিসেবে যোগদানের জন্য নিজেকে পরিবর্তন সহ তদবিরে উঠে পড়ে লেগেছেন । নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্টগ্রাম কেন্দ্রের একটি সূত্র জানায় ইদানিং তিনি হাটহাজারীর বিশিষ্টজনদেরকে নিয়ে প্রোগ্রামের আয়োজন শুরু করেছেন । বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ডঃ মোঃ ইউনুস এর আত্মীয় পরিচয়ধারী দু একজনকে এরই মধ্যে বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্টগ্রাম কেন্দ্রে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করিয়েছেন ।
বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্রের জিএম এর একটি অডিও ক্লিপ এই প্রতিবেদকের হাতে পৌঁছায়, অডিওটিতে শোনা যায়, জি এম অত্র কেন্দ্রের অতিরিক্ত পরিচালক (প্রশাসন) কে হুমকি দিয়ে বলেন, “ এই শুয়োরের বাচ্চা , লাত্থি দিয়ে বিদায় করে দেবো।”
অপরদিকে বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্রের অতিরিক্ত পরিচালক (অর্থ) মোঃ আতাউর রহমান নুর আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে শারীরিক নির্যাতন সহ জীবনের হুমকির বিষয় তুলে ধরে জিডি করার জন্যে অনুমতি চেয়ে মহা পরিচালক বরাবরে আবেদন করেন। তিনি উল্লেখ করেন, “বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজার অত্যন্ত ধূর্ত ও অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী লোক । এখানে তার সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের লোকের নিবিড় সখ্যতা রয়েছে অন্যদিকে সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে সাধারণ জীবন যাপন করায় বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্রের বাইরে কোন লোকের সঙ্গে আমার পরিচয় নাই । এমতাবস্থায় আমার জীবনের হুমকি বিবেচনা করে জেনারেল ম্যানেজার আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে জেনারেল ডায়েরি করার অনুমতি প্রার্থনা করছি ।
অপরদিকে বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালক স্বাক্ষরিত প্রশাসনিক সতর্কীকরণ মূলক একটি চিঠি গত ৩০ মে বিটিভির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয় ।
এতে বলা হয়” আপনি গত ২৯ মে মাসিক সমন্বয় সভার নির্ধারিত আলোচ্য সূচির উপর আলোচনা ও সিদ্ধান্তের পরও নির্ধারিত আলোচনায় অভদ্রোচিতভাবে ব্যক্তিগত আক্রমণাত্মক ও প্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে কথা বলতে শুরু করেন । আপনাকে অপ্রাসঙ্গিক আলোচনা থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করা হয় তা সত্বেও আপনি সভাপতির অনুরোধ উপেক্ষা করে উচ্চস্বরে চিৎকার করে ব্যক্তিগত আক্রোশ মূলক বক্তব্য রাখতে থাকেন । এমনকি সভা শেষে আপনি বিভিন্ন উস্কানিমূলক কথা বলেন আপনার পদমর্যাদা ও দায়িত্ব বিবেচনায় একজন সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে এমন আচরণ সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য এবং হীন উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলেও প্রতিয়মান হয়েছে । এমন আচরণ সরকারি কর্মচারী আচরণবিধিমালা ১৯৭৯ এর লঙ্ঘন এবং সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮ এর বিধি ২ এর অসদাচরণের দায়ে শাস্তিযোগ্য অপরাধ ।
চাকুরীর শিষ্টাচার বহির্ভূত আচরণ ও কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকার জন্য আপনাকে শেষবারের মতো প্রশাসনিকভাবে সতর্ক করা হলো । অন্যথায় আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে আপনার বিষয়ে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদনে এর প্রতিফলন ঘটবে ।
বিটিভি সংশ্লিষ্ট অপর একটি সূত্র জানায এখানে ১8 জন মেধাবী প্রযোজক থাকার পরও বিগত সরকারের আমলে চুক্তিভিত্তিক অযোগ্য অতিথি প্রযোজকদের দিয়ে অধিকাংশ প্রোগ্রাম সম্পন্ন করেন । যাদের দ্বারা একটি আলোচনার অনুষ্ঠানেরও বাজেট দেয়া হয় এক লাখ টাকার উপরে । যা অতীতে বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্রে কখনোই হয়নি । অথচ বিটিভির নিজস্ব প্রযোজকরা প্রোগ্রাম না থাকায় অলস সময় পার করেন I অপরদিকে অন্যান্য শাখায় তৎকালীন তথ্যমন্ত্রী হাসান মাহমুদের সুপারিশে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া অযোগ্য এবং কর্মকর্তা কর্মচারিকদের হুমকি প্রদান করা প্রায় ৩০ জন কর্মচারী এখনো বহাল তবিয়তে । জিএম এসব কর্মচারীদের নিয়ে তার নিজস্ব (?) বাহিনী গঠন করে দাম্ভিকতার সাথে অপরাধ কর্ম সংঘঠিত করে যাচ্ছেন। তাদের অত্যাচারে কেন্দ্রের কর্মকর্তারাও অসহায় বোধ করেন।
আরেকটি সূত্র জানায় জিএম এর নারী ঘটিত বিষয় ওপেন সিক্রেট I এসব বিষয়ে আলোচনা সমালোচনায় তিনি কুণ্ঠাবোধ করেন না ।
এ বিষয়ে তার নিজস্ব সিন্ডিকেট রয়েছে । সিন্ডিকেটের মধ্যে প্রযোজক ইয়াদ আহমেদ, আব্দুল্লাহ আল মামুন , অতিথি প্রযোজক সাখাওয়াত হোসেন মিঠু এবং বৈদ্যনাথ অধিকারীর নাম উঠে এসেছে ।
এ সকল বিষয়ে একজন নারী শিল্পীর সাথে এই প্রতিবেদকের কথা হয় । তিনি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ” তিনি তো সবসময় ঢাকার বিভিন্ন মডেল এবং চট্টগ্রামের সুন্দরী কিছু উপস্থাপিকা এবং শিল্পীদের নিয়ে মহা আনন্দে আছেন । এসব দেখারও কেউ নেই, আর তিনি এসবের ধারও ধারেন না । ” ঐ শিল্পী এই প্রতিবেদকের কাছে জানান অভিযুক্ত এ সকল কর্মচারী এবং অতিথি প্রযোজকরা এই সরকারের শাসনামলে কিভাবে টিভি ভবনে প্রবেশ করে এটাই খুঁজে পাইনা । কারণ তারা যেভাবে বিগত সরকারের দাপট দেখিয়েছে তাদের নিজে থেকেই আসা উচিত নয় । পরিস্থিতি এভাবে চলতে থাকলে চট্টগ্রামের শিল্পীরা যেকোনো সময় অনুষ্ঠান বর্জন তথা আন্দোলনে নামবে বলে আমি মনে করি ।
এ বিষয়ে তাকে প্রশ্ন করা হলে……