নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই কাপাসিয়ায় যত্রতত্র চলছে ইটভাটা ; হুমকিতে সবুজ পরিবেশ
সাঈদ মৃধা :
গাজীপুরের কাপাসিয়ায় নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে যত্রতত্র ইটভাটা স্থাপন ও কাঠ পোড়ানোর কারণে বায়ু দূষণে চরম দুর্ভোগে স্থানীয় আবাসিক এলাকার বাসিন্দারা। উপজেলায় ৩৪টি ইটভাটা কার্যক্রম চালালেও বৈধ কাগজ রয়েছে মাত্র ২টির।
গাছপালার সবুজ অরণ্যের মাঝেই গড়ে তোলা হয়েছে অবৈধ এ সব ইটভাটা। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ভাটা গড়ে তোলার প্রতিযোগিতা চলছে উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে। এসব ভাটায় ইট তৈরিতে ব্যবহার হচ্ছে আবাদি জমির টপ সয়েল।
আবাদি জমি ও আবাসিক এলাকায় ইটভাটা গড়ে তোলার পর ছাড়পত্র নিতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চলছে ভাটা মালিকদের দৌড় ঝাঁপ। আর জ্বালানি হিসাবে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। স্থানীয়দের অভিযোগ, ভাটার ভয়াবহ দূষণে স্বাস্থ্যঝুঁকিসহ গাছে দেখা দিয়েছে ফলন বিপর্যয় ও নানা রকমের মোড়ক।
অক্টোবরের শেষ থেকে পুরোদমে ইট প্রস্তুতে ব্যস্ততা বাড়ে এসব ভাটায়। অন্তত ৫ মাস ইট তৈরির এ কারবার চলবে। এখন পুরোদমে চলছে ভাটা গুলোতে ইট তৈরির কাজ।
পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ও জেলা প্রশাসনের লাইসেন্সসহ বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই কাপাসিয়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে শত শত একর কৃষি জমিতে গড়ে উঠেছে ইটভাটা। ইটভাটায় ফসলি জমি ও এলাকার ছোট-বড় টিলা কেটে মাটি নিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ইট। অনেক সময় জোর জবরদস্তি করে ফসলি জমির মাটি কেটে নিলেও প্রভাবশালী মহলের ভয়ে সাধারণ কৃষকরা মুখ খুলতে পারছে না। নিয়মনীতি না মেনে অবৈধ এসব ভাটায় ইট পোড়ানোর ফলে ব্যাপক বায়ু দূষণে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অপরদিকে সরকার বঞ্চিত হচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে।ভাটা গুলোর আশপাশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকার কারণে শিক্ষার্থীদের প্রতিষ্ঠানে রাস্তায় চলাচলে বিগ্ন হচ্ছে। ইটভাটায় চলাচল ও মাটির ড্রাম ট্রাক ও ট্রলির সাথে শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি হয়ে ছাত্রছাত্রী ও পথচারীদের মৃত্যুর ঘটনাও রয়েছে অহরহ।
ইটভাটা চালু করতে হলে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ও জেলা প্রশাসকের লাইলেন্স নিতে হয়। পরিবেশ অধিদপ্তর ‘ইটভাটা স্থাপন ও পরিচালনা সংক্রান্ত’ গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা আছে, সরকার ইট প্রস্তুত কার্যক্রমকে পরিবেশ সম্মতভাবে পরিচালনার লক্ষ্যে ‘ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ (সংশোধিত ২০১৯) জারি ও কার্যকর করেছে। উক্ত আইনে নিম্নরূপ বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে-পরিবেশ অধিদপ্তরের অবস্থানগত/পরিবেশগত ছাড়পত্র ও জেলা প্রশাসককর্তৃক ইস্যুকৃত লাইসেন্স ব্যতীত কোনো ব্যক্তি ইটভাটা স্থাপন ও পরিচালনা করতে পারবেন না। আবাসিক, সংরক্ষিত বা বাণিজ্যিক এলাকা, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা বা উপজেলা সদর, সরকারি বা ব্যক্তি মালিকানাধীন বন, অভয়ারণ্য, বাগান বা জলাভূমি; কৃষিজমি; পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকায় ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। নিষিদ্ধ এলাকার সীমারেখা হতে ন্যুনতম এক কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে; সরকারি বনাঞ্চলের সীমারেখা হতে দুই কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে, বিশেষ কোনো স্থাপনা, রেলপথ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও ক্লিনিক, গবেষণা প্রতিষ্ঠান বা অনুরূপ কোনো স্থান বা প্রতিষ্ঠান হতে এক কি.মি. দূরত্বের মধ্যেও ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ইটভাটার মালিকরা আইন ও নিয়মনীতির কোনো তোয়াক্কাই করছেন না। কাপাসিয়া উপজেলায় প্রায় ৩৪টি ইটভাটা রয়েছে। উপজেলার কাপাসিয়া সদর, দুর্গাপুর, তরগাঁও, কড়িহাতা, সনমানিয়া, ঘাগটিয়া, রায়েদ, সিংহশ্রী ও টোক ইউনিয়নে রয়েছে এসব অবৈধ ইটভাটা। ইটভাটার মালিকরা কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে শত শত একর ফসলি জমি নষ্ট করে ইটভাটা তৈরি করছেন। তাছাড়া বনাঞ্চলের পাশে, লোকালয়, হাটবাজার ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশেও গড়ে উঠেছে বহু ইটভাটা। নদীর তীর দখল করেও অনেক ইটভাটা গড়ে উঠেছে। শত শত ড্রাম ট্রাক ও অবৈধ ট্রলি গাড়ি দিয়ে অনবরত ফসলি জমি ও টিলা কেটে মাটি এনে ইটভাটায় ইট তৈরি করা হচ্ছে। এতে করে এলাকার কৃষি জমি নষ্ট হচ্ছে, পরিবেশ দূষিত হচ্ছে ও স্থানীয় রাস্তাঘাটের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। অনেক ইটভাটায় লাকড়ি পোড়ানোর কারণে কালো ধোঁয়ায় এলাকার লোকজনের মধ্যে সর্দি-কাশিসহ বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। ভাটায় চালিত যানবাহন চলাচলের কারণে বাড়িঘরে এতো পরিমাণে ধূলো বলি প্রবেশ করছে তা বলাবাহুল্য। এর মুল কারণ হচ্ছে আবাসিক ও বসতি এলাকায় ভাটা স্থাপন।
পরিবেশ দূষণের কারণে এলাকায় ফসলের উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে। ইটভাটার আশপাশ এলাকায় নারকেল, সুপারি, কলা, আখসহ নানান ফলদ গাছের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে বলে ভুক্তভোগী কৃষকরা জানিয়েছেন।
গতকাল বুধবার কাপাসিয়ায় অবৈধভাবে গড়ে উঠা এসব ইটভাটা বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার তামান্না তাসনীম সাংবাদিকদের বলেন, বিধি মোতাবেক সকল অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে দ্রুত কারযকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।