কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার মানিকারচর বাজারে অবস্থিত নিউ আল-শেফা জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সিজার অপারেশনের পর পেটে গজ রেখেই সেলাই করে দেওয়া হয় এক নারীর। এরপর কয়েকবার অসুস্থ হয়ে পড়লেও ভুল চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে নারায়ণগঞ্জের একটি হাসপাতালে অপারেশন করলে সেখানকার চিকিৎসকরা পেটে গজ দেখতে পান। এ বিষয়ে নিয়ে মঙ্গলবার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছে ভুক্তভোগী পরিবার।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের ১০ অক্টোবর এই হাসপাতালে প্রসূতিকে সিজারিয়ান অপারেশন করানো হয়। সিজারের দুদিন পর ভর্তি থাকা অবস্থায় ওই নারীর পেট ফুলে যায়। স্বজনরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানালে তারা গ্যাসের সমস্যার কথা বলে ডাক্তার দ্বারা ওষুধ লিখে ছাড়পত্র দিয়ে দেন। বাসায় চলে যাওয়ার কিছুদিন পর পুনরায় ব্যথা অনুভব করলে তাকে ওই হাসপাতালে আনা হয়। এরপর রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে আগের ফাইলপত্র রেখে দিয়ে একইভাবে গ্যাসের ওষুধ লিখে দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এরপর রোগীর প্রায় সময়ই পেটে ব্যথা করতো এবং প্রস্রাবের রাস্তা দিয়ে পুঁজ বের হতো, যা দেখে রোগী মনে করতেন সাদা স্রাব। এভাবে প্রায় ১৯ মাস ওষুধ খাওয়ানোর পর ব্যাথা ও পুঁজ যাওয়া বন্ধ না হলে স্বজনরা ওই হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে একটি আল্ট্রাসনোগ্রাম করান। এতে টিউমারের মতো কিছু একটা দেখা যায় বলে জানান সনোলজিস্ট।
পরে রোগীকে উন্নত চিকিৎসা করানোর জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হলে স্বজনরা ঢাকায় না নিয়ে নারায়ণগঞ্জের একটি প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করান। পর ওই হাসপাতালের চিকিৎসক বিষয়টি নিশ্চিত করতে পুনরায় আল্ট্রাসনোগ্রাম করেন। তারাও দেখতে পান টিউমারের মতো কিছু একটা দেখা যাচ্ছে। কর্তব্যরত চিকিৎসক দ্রুত অপারেশন করানোর জন্য রোগীর আত্মীয়স্বজনদের পরামর্শ দিলে অপারেশন করার জন্য অনুমতি দেন তারা। পরে অপারেশন করতে গেলে পেটের ভেতর টিউমারের বদলে দেখতে পান একটি গজ। এই গজের কারণে পেট থেকে পায়খানার রাস্তা পর্যন্ত ইনফেকশন হয়ে পঁচে যায় বলে জানান সার্জন। যার কারণে ওই পায়খানার রাস্তা বিমুখ করে পেটের দিকে পায়খানার রাস্তা করে দেওয়া হয়। আর যে গজ পেটের ভিতরে পাওয়া গেছে সেটি সিজার করার সময় ভিতরে রেখেই সেলাই করে দেন অভিযুক্ত হাসপাতালের গাইনি সার্জন।
ভুক্তভোগী রোগীর স্বামী মো. আলমগীর হোসেন বলেন, “আমার রোগীর এ অবস্থার জন্য নিউ আল-শেফা জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কর্তৃপক্ষ দায়ী। তাদের ভুলের জন্য আমার স্ত্রীর পেছনে প্রায় ৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বললে তারা বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বিভিন্নভাবে আমাকে হুমকি দেয়। আমি আমার স্ত্রীর এই করুণ অবস্থার জন্য আর্থিক ক্ষতিপূরণসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে উপযুক্ত বিচারের দাবি জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সায়মা রহমান বলেন, “আমাকে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। আমি চিকিৎসার সব কাগজপত্র এর সঙ্গে সংযুক্ত করে দিতে বলেছি। আমার হাতে আসার সঙ্গে সঙ্গে তদন্ত করা হবে। আর যদি তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতার প্রমাণ পাই তাহলে ওই হাসপাতালের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
উল্লেখ্য, এর আগেও এই হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় রোগী মারা যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। তখন ওই হাসপাতালের বিরুদ্ধে মামলা হলে আল-শেফা জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারটি বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। পরে নামের আগে ‘নিউ’ শব্দ বসিয়ে অনুমোদন নিয়ে পুনরায় চালু করা হয় হাসপাতালটি।