সাতক্ষীরার দেবহাটায় নানা প্রস্তুতি চলছে রূপসী ম্যানগ্রোভ পর্যটন কেন্দ্র
মিহিরুজ্জামান সাতক্ষীরাঃ
দর্শণার্থীদের বিনোদন নিশ্চিত করতে নানা প্রস্তুতি চলছে সাতক্ষীরার দেবহাটার রূপসী ম্যানগ্রোভ পর্যটন কেন্দ্রে। ইছামতির কোল ঘেঁষে যেন একটি আজব চিড়িয়াখানা। উপজেলার সদর থেকে দুই কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ভারত সীমান্ত ইছামতির কোল ঘেঁষে। মিনি সুন্দরবন নামে অবশিষ্ট, আর এমনি সুন্দরবন অর্থাৎ ম্যানগ্রোভের মধ্যে হরেক রকমের হাঁস, মুরগী, খরগোশ, বানর, পাখি ও কেওড়া গোল গাছ-গাছালী। ইছামতি নদী ভ্রমনের জন্য আছে নৌকা। স্থলে বেড়ানোর জন্য আছে ঘোড়া। বাচ্চাদের আনন্দ উপভোগ করার জন্য ট্রেন। বাচ্চাদের দেখার জন্য আছে বিভিন্ন কাটুন।
ফুলের বাগানে ভর্তি আজব চিড়িয়াখানাটি ও মিনি সুন্দরবন দেখতে প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে আসছে আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা। আছে গেস্ট হাউস, মুসলিমদের জন্য আছে নামাজের জায়গা। দিন অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথে লোক জনের সংখ্যাও বেড়ে চলেছে। পশু-পাখির খামার বানিয়েছেন এর অনেক আগে থেকে। বিভিন্ন জাতের কবুতর, লাভ বার্ড, কোকাটেল, পাজেরিকা, টিয়া, কালিম পাখি, তোতামুখি, ইমু পাখি সহ বহু পাখির আছে। বিভিন্ন জাতের ফুল দ্বারা পরিবেষ্ঠিত সুন্দরবনটি। সরেজমিনে চিড়িয়াখানাটি দেখলে মন জুড়িয়ে যাবে সকলের। দেবহাটা উপজেলার ইছামতি নদীর তীরে সুন্দরবনের আদলে গড়ে তোলা পর্যটন কেন্দ্রটি ১৫০ বিঘা জমিতে বিস্তৃর্ণ। এই বনের বুক চিরে প্রায় ১০ একর জমিতে অনামিকা লেক, পিকনিক স্পট, শিশুপার্ক, কনফারেন্স রুম, বনের ভিতরে পাকা ট্রেইল, সেলফি পয়েন্ট, প্যাডেল চালিত বোড, ইছামতির পাড়ে বসে বৈকালিন তিন নদীর মোহনা দেখার সুব্যবস্থা। এ ছাড়া নারী-পুরুষের জন্য আলাদা নামাজের স্থান। সুপেও পানির ব্যবস্থা ছাড়াও নতুন ভাবে যোগ হচ্ছে রাত্রি যাপনের জন্য কটেজ। নানা মূখি বিনোদনের সুযোগ সৃষ্টি করা বনটিতে বর্তমানে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।
জেলা সদর হতে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দুরে ইছামতি নদীর তীরে শিবনগর মৌজায় অবস্থিত এ বনটি। এটি উপজেলার রূপসী ম্যানগ্রোভ পর্যটন কেন্দ্র নামে পরিচিত। ইছামতি নদীর তীরে কৃত্রিম ভাবে সৃষ্টি এ ম্যানগ্রোভ পর্যটন কেন্দ্রটি এ উপজেলায় মানুষকে গর্বিত করে। উপজেলা প্রশাসনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় টাউন শ্রীপুর এলাকায় ভারতের টাকী পৌরসভার বিপরীতে ইছামতি নদীর তীরে শীবনগর মৌজায় এ বনটি তৈরী করা হয়েছে। এই পর্যটন কেন্দ্রের সার্বিক উন্নয়নের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও বিভিন্ন সহযোগীতা প্রদান করা হয়েছে। এই বনটিতে বহু প্রজাতির ফলজ ও বনজ বৃক্ষ রয়েছে। সুন্দরবনের আদলে বিভিন্ন প্রজাতির বনজ বৃক্ষের চারা এনে রোপন করে ব্যাপক বনের সৃষ্টি করা হয়েছে। যার মধ্যে কেওড়া, বাইন, গোলপাতা, কাঁকড়া, নিম, সুন্দরী, হরকচা সহ বিভিন্ন প্রজাতির ফলজ ও বনজ উদ্ভিদ। বিনোদন প্রিয়া সীদের জন্য রয়েছে বসারস্থান। শিশুদের আনন্দ দেওয়ার জন্য কৃত্রিম বিভিন্ন প্রজাতির পশু পাখি। স্থানীয় সরকার বিভাগ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে এটি পরিপূর্ণ বনে পরিণত করতে উপজেলা প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে।
এ দিকে,সাতক্ষীরা জেলার ইছামতি সীমান্তের ইছামতির তীরে গড়ে ওঠা দৃষ্টিনন্দিত মনো মুগ্ধকর প্রাকৃতিক অপরূপ সৌন্দর্য ম্যানগ্রোভ মিনি সুন্দরবনটির পরপর পরিধি বাড়ছে। ২০০৯ সালে দেবহাটার সুঁশিলগাতী এলাকার নদীর বেড়িবাধ ভেঙ্গে প্লাবিত হলে ২০১০ সালে উপজেলার প্রশাসনের উদ্যোগে বাধ রক্ষায় ও প্রাকৃতিক ভারসম্য রক্ষার জন্য তৈরী করা হয় ম্যানগ্রোভ বন। বেশ কয়েক বছর যেতে যেতে বনের আকার বৃদ্ধি পেতে থাকে। আর রক্ষা পায় আশে পাশের এলাকাবাসীরা। প্রতি বছরে উপজেলার ও জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ উপভোগ করতে আসে প্রকৃতির এই দৃশ্য। তাছাড়া বিভিন্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে বনটিতে কানায় কানায় দর্শণার্থী পরিপূর্ণ হয়।
তাছাড়া শীতের প্রথম থেকে শুরু হয় পিকনিক উৎসব। অনেকে এসে রান্না বান্না করে ধুমধাম চড়ই ভাতিও করে। কয়েক মাস ধরে চলতে থাকে উৎসবের আমেজ। সেই আমেজ ছড়িয়ে পড়ে সকলের মাঝে। বর্তমান স্থানটিতে প্রবেশ করতে হলে উপজেলা প্রশাসনেকে টিকিটের মাধ্যমে ফি দিতে হয়। যার পুরো টাকা সরকারি তহবিলে জমা হয়। স্থানটি ইছামতির তীরে নিরিবিলি হওয়ায় বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ এখানে সময় কাটাতে আসেন।
ঘুরতে আসা দর্শণার্থীরা জানান,বনটি ইছামতি নদীর পাড়ে হওয়ায় সব চেয়ে বেশি ভালো লাগে। এ পাশে বাংলাদেশ, অপর পাশে ভারত- মাঝ খানে নদী। জায়গাটি অত্যান্ত নিরিবিলি হওয়ায় সব বয়সী মানুষের কাছে প্রিয়। তাছাড়া বিভিন্ন দিবস বা ছুটির দিনে বেশি দুরে না যেয়ে দেবহাটায় এসে সুন্দরবনের স্বাদ পায়। নারী ও শিশুদের জন্য স্থানটি খুবই নিরাপদ বলেও দাবি দর্শণার্থীদের।
এই স্পটটিতে প্রতিদিন প্রায় হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটে বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। তাছাড়া ছুটি ও বিভিন্ন উৎসব ঘিরে দিনে ৩/৪ হাজার দর্শণার্থীদের পদাচরণা ঘটে এই বিনোদন কেন্দ্রে। বর্তমানে পর্যটন কেন্দ্রে দায়িত্বে নিয়োজিত ম্যানেজার সোহেল বলেন, বিনোদন কেন্দ্রে এসে যাতে কেউ কোন প্রকার হয় রানি না হয় সে ব্যাপারে আমাদের স্টাফরা নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছেন। আমরা দর্শণার্থীদের বিনোদনের জন্য নতুন নতুন সুযোগ সৃষ্টি করছি। এ দিকে নানা উদ্যোগ আর আশার কথা জানিয়ে দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, প্যারা সাইডে লোহার হাতল লাগানো, ইছামতি নদীর ধারে বসার জায়গা,শিশু পার্কের ভিতরে এবং বাইরে রাইড সংযুক্ত করা হয়েছে। রাস্তা প্রশস্ত করা হয়েছে। থ্রি ফেজের বিদ্যুৎ লাইন সংযোগ দেওয়া হয়েছে। ভিতরের রাস্তার কার্পেটিং এর কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। পরে বড় গাড়িগুলো ঢুকতে কোন অসুবিধা হবে না।
যেহেতু আমার সুন্দরবনের কাছাকাছি অবস্থান করি। সে কারনে রাজধানী সহ দেশ-বিদেশী পর্যটক সুন্দর ভ্রমনে আসেন। তাদের কথা বিবেচনা করে রূপসী ম্যানগ্রোভ পর্যটন কেন্দ্রটি দর্শণার্থীদের মত করে সাজানো হচ্ছে। আমাদের পক্ষ থেকে পর্যটন কেন্দ্রের উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। আমি অনুরোধ করব যারা শীতের ছুটিতে বাড়িতে ফিরবেন অন্তত এক বার হলেও দেবহাটা রূপসী ম্যানগ্রোভ পর্যটন কেন্দ্রটি ঘুরে যাবেন।